Oct 18 2021
হয়বতনগর দেওয়ান সাহেববাড়ি
কিশােরগঞ্জ জেলার অন্তর্গত কিশােরগঞ্জ পৌরসভার মধ্যে প্রসিদ্ধ হয়বতনগর দেওয়ান। বাডি অবস্থিত । ইতিহাস-প্রসিদ্ধ নবাব ঈশা খাঁর বাড়ি কিশােরগঞ্জ শহরের অনতি দূরে। মঙ্গলবাড়িতে অবস্থিত। নবাব ঈশা খার নাতি দেওয়ান লতিফ খা বর্তমান হয়বতনগরে এসে বাসস্থান নির্মাণ করেন এবং এখান হতে রাজ্য পরিচালনা করতেন। পুরানাে ইমারত, ভগপ্রাসাদ, মাঠ, দিঘি, মসজিদ সবকিছু মিলিয়ে আজো পরানাে ঐতিহ্য বহন করে দাড়িয়ে আছে হয়বতনগর দেওয়ানবাড়ি। বর্তমানে শহরের চাকচিক্যে বাড়িটি স্নান দেখালেও আভিজাত্যতার গর্বে শির উচু করে দণ্ডায়মান।।
হয়বতনগর দেওয়ান বাড়ি নিবাসী দেওয়ান এলাহ নেওয়াজ খান সুলতানশী হতে সৈয়দ। আবদুল্লাকে হয়বতনগর নিয়ে আসেন এবং নিজ কন্যার বিবাহ দিয়ে ও জমিদারি প্রদান করে জামাতা আবদুল্লাকে দেওয়ান বাড়ির ৪ আনা অংশ দান করেন। সে থেকেই হয়বতনগরে। সৈয়দগণের অবস্থান শুরু এবং অদ্যাবদি আছে। প্রথম বিবি মারা যাওয়ার পর সৈয়দ আবদুল্লাহ জঙ্গল বাড়িতে দ্বিতীয় বিবাহ করেন।
সৈয়দ সাহেববাড়িতে পুরানাে ঢাল, তলােয়ার যা পাহারাদারগণ ব্যবহার করত তা আজো এ বাড়িতে দেখা যাচ্ছে। আরাে কিছু দর্শনীয় প্রাচীন জিনিস তারা কিশােরগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরিতে দান করে গেছেন। নবাবী আমলের গেইট, হুসেনী দালান, ইমারত সেকালের প্রাচুর্যের নিদর্শন আজ ভগ্নাবস্থায় অতীত সাক্ষ্য বহন করে নীরবে দাঁড়িয়ে আছে। সৈয়দদের পরশে, স্নেহের আবেশে এলাকা হয়েছে সমৃদ্ধ। তাদের দান ও অকৃত্রিম ভালােবাসায় মানুষ হয়েছে মুগ্ধ। কিশােরগঞ্জ সােয়ালাখিয়া ঈদগাহের প্রতিষ্ঠাতা এ সাহেববাড়ি । হয়বতনগর বিখ্যাত আলিয়া মাদ্রাসার স্থান সাহেববাড়ির দান।
সৈয়দ নাসির উদ্দিন সিপাহসালারের ১২তম অধস্তন পুরুষ জনাব সৈয়দ ওয়াতিরের পত্র সৈয়দ আঃ ছােবাহান। তাঁর তিন পুত্র প্রথম পুত্র সৈয়দ আব্দুল্লাহ, দ্বিতীয় সৈয়দ আঃ হেলীম, তৃতীয় সৈয়দ আঃ বাকী।বৃহত্তর সিলেট জেলার অধীনে বর্তমান হবিগঞ্জ জেলার অন্তর্গত সুলতানশী জমিদার বাড়ি অবস্থিত।
সে ঐতিহাসিক জমিদার বাড়িতে সৈয়দ আব্দুল্লাহ জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষা। লাভ-এর পরবর্তী সময় ভারতের দেওবন্দে লেখাপড়া করেন। তিনি জমিদার পরিবারে জনা নিলেও খুব সাদাসিধে জীবনযাপন করতে ভালােবাসতেন। যৌবনে তার অনুপ্রেরণায় হবিগঞ্জ মহকুমার বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। সৈয়দ আব্দুল্লাহর পূর্বপুরুষ সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দিন (রঃ)। পূর্বপুরুষদের মতাে সৈয়দ আব্দুল্লাহও ধর্ম প্রচারে আত্মনিয়ােগ করেন।
সৈয়দ আব্দুল্লাহ আধ্যাত্মিক জ্ঞান, অমায়িক ব্যবহার, পরহেজগারী সহ বিভিন্ন গুণের অধিকারী ছিলেন। বারাে ভূঞা প্রধান ঈসা খা মসনদেই আলার ১১তম বংশধর দেওয়ান এলাহী নেওয়াজ খা এসব অবগত নয় । তার কোনাে পুত্রসন্তান ছিল না। তিনি দুই কন্যার জনক। (১) দেওয়ান জমিলা খাতুন, (২) দেওয়ান আসমা আক্তার খাতুন। দেওয়ান এলাহী। নেওয়াজ সাহেবের প্রথম কন্যাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য সুলতানশী হাবেলির জনাব সৈয়দ আঃ ছােবাহান সাহেবের কাছে হয়বতনগর জমিদার বাড়ির পক্ষ থেকে বিবাহের প্রস্তাব পাঠান হয়। দেওয়ান এলাহী নেওয়াজের কোনাে পুত্রসন্তান না থাকার দরুন তিনি ভীষণ চিন্তিত ছিলেন যে, এত বড় জমিদারি কে পরিচালনা করবেন। তিনি জানতে পারলেন হবিগঞ্জ জেলার অন্তর্গত সুলতানশী হাবেলির এক সৈয়দজাদা আছেন তার নাম সৈয়দ আব্দুল্লাহ (চান মিয়া)।
এদিকে সৈয়দ আঃ ছােবহান তার বড় পুত্র কিশােরগঞ্জ মহকুমা বর্তমান কিশােরগঞ্জ জেলার অন্তর্গত হয়বতনগর জমিদার বাড়িতে বিবাহ করাবেন স্থির করলেন।
সৈয়দ আব্দুল্লাহ দেওয়ান জমিলা খাতুনকে বিবাহ করেন। বিবাহের পর থেকে তিনি। জমিদারি দেখাশুনার দায়িত্ব দক্ষতার সাথে পালন করেন। ঢাকা, নরসিংদী, বেলাবাে, মনােহরদী, কিশােরগঞ্জ, নেত্রকোনা, মােহনগঞ্জ, কমলাকান্দা, বি.বাড়িয়ার সরাইল ইত্যাদি জমিদারি এলাকা দেখাশুনা করতেন।
| জমিদার হিসেবে সৈয়দ আব্দুল্লাহ অমায়িক ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন। তার কাছে। হিন্দু ও মুসলমান প্রজারা সমান কদর পেত। প্রজাদের সুবিধার জন্য মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল। গােরস্থান, শ্মশানঘাট ব্যাপকভাবে নির্মাণ করেন। তিনি একজন বিদ্যুৎসাহী ব্যক্তিত্ব ছিলেন।
উপমহাদেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ ঈদগাহ কিশােরগঞ্জ শােলকিয়া ঈদগাহ । তিনি ঈদগাহের ইমামতি করেন। কিশােরগঞ্জ হাই স্কুল প্রতিষ্ঠাকাল ১ জুলাই, উক্ত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রাক্কালে ১০ মে, ১৮৮১-তে এক সভা অনুষ্ঠিত হয় যা নয় এনট্রেন্স স্কুল কমিটির সভা নামে পরিচিত । উক্ত কমিটিতে ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন সৈয়দ আব্দুল্লাহ জমিদার, হয়বতনগর ।
“A history of the Charitable Despensaries in the District Mxmensing” গ্রন্থের ১৯১৯ সালে প্রকাশিত ও কৃষ্ণনাথদের উক্ত গ্রন্থ থেকে জানা। সায় যে, ১৮৭৫ সালে হয়বতনগর জমিদার সৈয়দ আব্দুল্লার উদ্যোগে দাতব্য চিকিৎসালায় তসেবে কিশােরগঞ্জ সদর হাসপাতালের যাত্রা। দীর্ঘ ১৪ বছরের ব্যয়ভার বহন করেন। জমিদারির আয় থেকে। দেওয়ান জমিলা খাতুন নিঃসন্তান ছিলেন। তার মৃত্যর পর স্বামী। সৈয়দ আব্দুল্লাহ স্ত্রীর অংশ থেকে (চার আনা) জমিদারির অংশ লাভ করেন।
সৈয়দ আব্দুল্লাহ দ্বিতীয় বিবাহ করেন কিশােরগঞ্জ অন্তর্গত ঐতিহাসিক জঙ্গলবাড়ি মসনদে-ই-আলা ঈশা খাঁর অধস্তন পুরুষ দেওয়ান চোবাহান দাদ খার একমাত্র কন্যা দেওয়ান বরজেস্তা আক্তার খাতুনকে । দেওয়ান বরজেস্তা আক্তার খাতুনের গর্ভে তিন পুত্র ও দুই কন্যা জন্মগ্রহণ করেন । (১) সৈয়দ উবেদ উল্লাহ, (২) সৈয়দ আজিজ উল্লাহ (কুমিল্লার সাহেব)। (৩) সৈয়দ মােহাম্মদ উল্লাহ টেনামিয়া । (১) কন্যা সৈয়দা হাফিজের মা, (২) সৈয়দা ছামেরা আক্তার খাতুন-এর বিবাহ হয় সুলতাশী হাবেলির সৈয়দ আঃ আলিমের সাথে। সৈয়দ আব্দুল্লাহ দ্বিতীয় বিবি ইন্তেকালের পর তিনি পুনরায় বিবাহ করেন কিশােরগঞ্জ জেলার অন্তর্গত বৌলাই জমিদার বাড়ির সৈয়দ শাহ মােঃ সায়েফুল হক (দাউদনগর) সাহেবের পুত্র সৈয়দ আঃ বারী সাহেবের কন্যা সৈয়দা ফরকুন্দা আক্তারকে। সৈয়দা ফরকুন্দা আক্তার খাতুনের গর্ভে দুই ছেলে – (১) সৈয়দ মােঃ রাজী উল্লাহ, (২) সৈয়দ মােঃ আতিকুল্লাহ (অ্যাডভােকেট)।
সৈয়দা ফরকুন্দা আক্তার খাতুন মসনদে-ই-আলা ঈসা খাঁ ১১তম বংশধর খােদানেওয়াজ খার একমাত্র কন্যা দেওয়ান রওশন আরার বিবাহ হয় নরপতি সৈয়দ শাহ আহমদ উল্লার সাথে। দেওয়ান রওশন আরার কন্যা দেওয়ান তাবিন্দা আক্তার খাতুন তার। দুই কন্যার মধ্যে সৈয়দা ফরকুন্দা আক্তার খাতুন প্রথম কন্যা হয়বতনগর জমিদারবাড়ির সাবেক চার আনির অর্ধেক সম্পত্তির মালিক। মাতার দিক দিয়ে দেওয়ান ও পিতার দিক দিয়ে সৈয়দ।। | সৈয়দ আব্দুল্লাহ ৮৬ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। ছােট ভাই-এর অসুখের খবর পেয়ে তিনি নিজ দেশ সুলতানশী যান সেখানে ইন্তকাল করেন। তাকে দাফন করা হয়। সুলতানশী পারিবারিক কবরস্থানে তালতলার পুকুরের পার্শ্বে। সেই মহাপ্রাণ ব্যক্তি চিরদ্রিায়। শায়িত আছেন সেখানে। তার শৈশব কেটেছিল নিজ জন্মস্থান পৈত্রিক নিবাস সুলতানশীতে।